যে ১০ রপ্তানি পণ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক দিতে হবে

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে ৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। নতুন শুল্ক যুক্ত হওয়ার ফলে এখন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যে গড় শুল্কহার দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন করে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক যোগ হওয়ায় রপ্তানিকারকদের জন্য এটি একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন ও ট্যারিফ শিডিউলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ দেশটিতে ১,২০৪টি পণ্যে রপ্তানি করেছে, যার প্রতিটির পণ্যের শুল্কহার ছিল ০ থেকে ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত। পাল্টা শুল্ক যুক্ত হলে বেশ কিছু পণ্যে শুল্কহার মারাত্মকভাবে বাড়ছে।

যেসব পণ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক

১. প্রক্রিয়াজাত তামাক পণ্য:
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখে পড়া পণ্য এই তামাকজাত পণ্য, যেখানে আগেই শুল্কহার ছিল ৩৫০ শতাংশ। এখন নতুন শুল্ক যুক্ত হয়ে তা দাঁড়াবে ৩৭০ শতাংশে। যদিও এই পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ খুবই সামান্য—মাত্র ৭৪ হাজার ডলার।

২. চামড়াবিহীন বিশেষ জুতা (রাবার/কাপড়):
এই জুতায় আগে ৫৫ শতাংশ হারে শুল্ক আদায় করা হতো, এখন তা হবে ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশ গত বছর এই পণ্যে ৭৪ হাজার ডলার রপ্তানি করেছে।

৩. কম দামি চামড়াবিহীন জুতা:
প্রতি জোড়া জুতার দাম তিন ডলারের নিচে হলে, শুল্কহার দাঁড়াবে ৬৮ শতাংশ (পূর্বে ৪৮%)।

৪. পানিরোধী প্লাস্টিক বা রাবারের জুতা:
শুল্ক বাড়ছে ৩৭.৫ শতাংশ থেকে ৫৭.৫ শতাংশে। এই পণ্যে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৬.৭৫ লাখ ডলার।

৫. কৃত্রিম তন্তুর টি–শার্ট, সোয়েটার ইত্যাদি:
৭ ধরনের পোশাকে আগের শুল্ক ছিল ৩২ শতাংশ, এখন তা হবে ৫২ শতাংশ। গত বছর এই পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের।

৬. কৃত্রিম চামড়ার জুতা:
প্রতি জোড়ায় গড়ে ৫১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪.৯০ লাখ ডলারের এই পণ্য।

৭. শিশুদের কৃত্রিম তন্তুর সোয়েটার:
শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়ছে ৫০ শতাংশে। রপ্তানি হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ ডলারের।

৮. নারী ও শিশুদের সোয়েটার–আউটওয়্যার:
ছয় ধরনের পণ্যে শুল্ক ২৮.৬০ শতাংশ থেকে বাড়ছে ৪৮.৬০ শতাংশে। রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের।

৯. স্কি স্যুট, ব্লেজার, ট্র্যাকস্যুট:
১৩ ধরনের পোশাকে শুল্ক ২৮.২০% থেকে ৪৮.২০% হতে যাচ্ছে। রপ্তানি মূল্য ছিল ১৭ কোটি ডলার।

১০. ছেলেদের প্যান্ট, মেয়েদের স্যুট:
১৪ ধরনের পোশাকে শুল্ক বাড়বে ২৮% থেকে প্রায় ৪৮% পর্যন্ত। রপ্তানি হয়েছে ৩৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার।

সার্বিক প্রভাব কী?

যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবে, ২০২৪ সালে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে মোট রপ্তানি হয়েছে ৮৪৪ কোটি ডলারের পণ্য। তবে উচ্চ শুল্কের আওতাভুক্ত পণ্যের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সামগ্রিক রপ্তানিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকেরা।

চট্টগ্রামের ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন,

“পরিমাণে কম হলেও বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শুল্কের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। পাল্টা শুল্ক যুক্ত হয়ে খরচ বাড়লেও খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ, প্রতিযোগী দেশগুলোতেও শুল্কহার কাছাকাছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই পাল্টা শুল্ক সিদ্ধান্ত এসেছে মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উত্তেজনার অংশ হিসেবে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করছে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতাকে উৎসাহ দিতে। যদিও বাংলাদেশ সরাসরি টার্গেট না হলেও, অনেক পণ্য গোষ্ঠী পাল্টা শুল্কের আওতায় পড়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post