অ্যালার্জি: এক জটিল কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ


অ্যালার্জি—এই শব্দটা শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে হাঁচি, চুলকানি, শ্বাসকষ্টের মতো বিরক্তিকর উপসর্গ। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষই এই সমস্যায় ভোগেন। কেউ কেউ দিনে কয়েকবার হাঁচেন, কারও আবার সামান্য ফুলের গন্ধেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। খাবার, ধুলাবালি বা গরুর দুধ—কিছু একটা খেলেই কারও গায়ে র‍্যাশ ওঠে বা চোখ লাল হয়ে যায়।

কেন হয় অ্যালার্জি?

আমাদের দেহে রয়েছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা, যাকে বলে ইমিউন সিস্টেম। এটি আমাদের রক্ষা করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাকের মতো ক্ষতিকর জিনিস থেকে। কিন্তু কখনো কখনো শরীর কিছু সাধারণ জিনিসকেও 'বিপজ্জনক' মনে করে—আর তখনই শুরু হয় অ্যালার্জি। এই সাধারণ জিনিসগুলোকে বলা হয় অ্যালার্জেন, যেমন ধুলা, পরাগ, প্রাণীর পশম, খাবার, প্রসাধনী ইত্যাদি।

কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনি অ্যালার্জিতে ভুগছেন?

  • বারবার হাঁচি বা নাক দিয়ে পানি পড়া
  • চোখ লাল হওয়া ও চুলকানি
  • শ্বাসকষ্ট, বুকে সাঁই সাঁই শব্দ
  • গায়ে লাল লাল দানা বা চুলকানি
  • পেটব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া (বিশেষ করে খাবারে অ্যালার্জি হলে)

কিছু পরিচিত অ্যালার্জিজনিত রোগ:

🟠 অ্যালার্জিক রাইনাইটিস

বর্ষাকাল বা বসন্ত এলেই নাক দিয়ে পানি পড়ে, হাঁচি থামেই না। এটাই সিজনাল রাইনাইটিস। কেউ কেউ বছরজুড়ে এই সমস্যায় ভোগেন—তাদের ক্ষেত্রে এটা পেরিনিয়াল রাইনাইটিস।

🟠 হাঁপানি (অ্যাজমা)

শ্বাসের সময় বুকে সাঁই সাঁই শব্দ, দম বন্ধ লাগা, ঘন ঘন কাশি—এসবই হাঁপানির উপসর্গ। অনেক সময় ঠান্ডা লাগলে শিশুদেরও দেখা দেয়।

🟠 ত্বকের অ্যালার্জি (আর্টিকেরিয়া, অ্যাকজিমা, কনটাক্ট ডারমাটাইটিস)

ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা, চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া বা ফোলাভাব—সবই হতে পারে অ্যালার্জির লক্ষণ।

🟠 খাবারে অ্যালার্জি

চিংড়ি, গরুর দুধ, বাদাম ইত্যাদি খেলেই কারও কারও পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া হয় বা গায়ে র‍্যাশ ওঠে।

🟠 ওষুধে অ্যালার্জি

সবচেয়ে বিপজ্জনক। একবারই যথেষ্ট—শরীর ফুলে যেতে পারে, নিঃশ্বাস বন্ধ হতে পারে, এমনকি শকে চলে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।

কীভাবে ধরা পড়ে?

ডাক্তাররা সাধারণত নিচের পরীক্ষা করেন:

  • রক্তে ইওসিনোফিল বা IgE বাড়ছে কিনা
  • স্কিন প্রিক টেস্ট বা স্পেসিফিক IgE টেস্ট
  • বুকের এক্স-রেস্পাইরোমেট্রি

অ্যালার্জির চিকিৎসা কী?

অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা – সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
ওষুধ সেবন – যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, ইনহেলার, ইত্যাদি।
ভ্যাকসিন থেরাপি (ইমিউনোথেরাপি) – এটি দীর্ঘমেয়াদে উপকারী। ধীরে ধীরে শরীরকে প্রতিরোধ করতে শেখানো হয়।

অ্যালার্জি কি পুরোপুরি সারানো সম্ভব?

আগে মনে করা হতো, অ্যালার্জি সারানো যায় না। কিন্তু এখনকার চিকিৎসা এতটাই উন্নত হয়েছে যে, সময়মতো ধরা পড়লে অনেক ক্ষেত্রেই অ্যালার্জি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়—even সেরে ওঠাও সম্ভব।

শেষ কথা

অ্যালার্জিকে অবহেলা করা মানেই নিজের শরীরকে দুর্বল করে তোলা। তাই হাঁচি বা চুলকানিকে হালকাভাবে না নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কারণ, আজকের ছোট সমস্যা আগামীকাল বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post