সাবমেরিন মোতায়েনে ট্রাম্পের জবাব: স্নায়ুযুদ্ধের পুরনো কৌশলে ফের উত্তেজনা

ছবি সংগৃহীত

স্নায়ুযুদ্ধ যুগের পুরনো কৌশল ফিরিয়ে এনে পরমাণু অস্ত্রবাহী দুটি সাবমেরিন কৌশলগতভাবে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের হুমকির জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ট্রাম্প রাশিয়ার অর্থনীতিকে ‘মৃত অর্থনীতি’ আখ্যা দিলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান মেদভেদেভ। পাল্টা শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে না পারায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। শুক্রবার রাতে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠকের পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

🔻 ডেড হ্যান্ডের হুমকি

মেদভেদেভ পাল্টা হুমকিতে তুলে আনেন ‘ডেড হ্যান্ড’ কৌশলের কথা। এটি স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী একধরনের স্বয়ংক্রিয় বা আধা-স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এর মাধ্যমে দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধ্বংস হলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাল্টা পারমাণবিক হামলা চালানো সম্ভব। মূলত শত্রু পক্ষকে নিশ্চিত ধ্বংসের বার্তা দিতেই এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল।

ক্রেমলিন এখনও ট্রাম্পের সাবমেরিন মোতায়েন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রুশ পার্লামেন্ট সদস্য ভিক্তর ভোডোলাতস্কি দাবি করেছেন, “মহাসাগরে রাশিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিনের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি। ট্রাম্প যেসব সাবমেরিন পাঠাচ্ছেন, সেগুলো আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।”

🌊 দুই দেশের সাবমেরিন শক্তি: গভীর সমুদ্রে গভীর লড়াই

🇺🇸 যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন বাহিনী

ওহাইও-ক্লাস ‘বুমার’ সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পরমাণু প্রতিরক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। ২০টি পর্যন্ত এসএলবিএম (Submarine-Launched Ballistic Missile) বহনে সক্ষম এসব সাবমেরিনে রয়েছে ট্রাইডেন্ট ডি৫ ক্ষেপণাস্ত্র। ১৫ বছর পর্যন্ত বড় ধরনের মেরামত ছাড়াই চলার ক্ষমতা রাখে।

ফাস্ট অ্যাটাক সাবমেরিন হিসেবে রয়েছে:

  • ভার্জিনিয়া-ক্লাস (২৪টি সক্রিয়) — সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ডুবুরি অভিযানে উপযোগী
  • সিওউল্ফ-ক্লাস (৩টি) — উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন, টর্পেডো টিউব ৮টি
  • লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাস (২৪টি সক্রিয়) — স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে কার্যকর, বর্তমানে ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে ভার্জিনিয়া-ক্লাস দিয়ে

🇷🇺 রাশিয়ার সাবমেরিন বাহিনী

রাশিয়ার বহরে রয়েছে আনুমানিক ৬৪টি সাবমেরিন, যার মধ্যে ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী (SSBN) সাবমেরিন। এর মূল ভিত্তি হলো:

  • বোরেই-ক্লাস (৮টি) — প্রতিটিতে ১৬টি বুলাভা এসএলবিএম ও ৬টি টর্পেডো লঞ্চার
  • ডেলটা ৪-ক্লাস (৬টি) — পুরোনো হলেও এখনো সক্রিয়, প্রতিটিতে ১৬টি সিনেভা এসএলবিএম

সর্বাধুনিক ইয়াসেন-ক্লাস আক্রমণাত্মক সাবমেরিন রয়েছে ৪টি, যেগুলো ক্ষেপণাস্ত্রসহ ভূমিতে এবং সাগরে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে সক্ষম। তুলনামূলকভাবে কমসংখ্যক নাবিক দিয়ে পরিচালিত এ সাবমেরিনগুলো নিঃশব্দ ও কার্যকর।

⚠️ ফের স্নায়ুযুদ্ধের ছায়া

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এই পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েন আসলে এক ধরনের সামরিক বার্তা। আধুনিকায়ন ও শক্তির ভারসাম্য ধরে রাখতে গিয়ে উভয় দেশই যেন নিজেদের পুরোনো কৌশল ও শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং গোটা বিশ্বকেই ঠেলে দিচ্ছে এক অস্থির, উত্তেজনাপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে।

Post a Comment

Previous Post Next Post