![]() |
ছবি সংগৃহীত |
বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফট ইতিহাস গড়ল। প্রথমবারের মতো কোম্পানিটি তাদের বাজারমূল্য চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার স্পর্শ করেছে। এনভিডিয়ার পর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই মাইলফলক ছুঁয়ে মাইক্রোসফট আবারও প্রমাণ করল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ তারা-ই নেতৃত্ব দিচ্ছে।
ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের রেডমন্ডে সদরদপ্তর থাকা এই টেক জায়ান্ট বুধবার (৩১ জুলাই) ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের মূলধনী ব্যয় রেকর্ড পরিমাণে—প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার—পেরিয়েছে।
এই ঘোষণার পরপরই মাইক্রোসফটের শেয়ারমূল্যে বড় ধরনের উত্থান দেখা যায় এবং বাজারমূল্য গিয়ে ঠেকে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে, যা আগে কেবল এনভিডিয়া অর্জন করেছিল।
📈 এক দশকের পথে: এক থেকে চার ট্রিলিয়ন
মাইক্রোসফট প্রথমবার এক ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছিল ২০১৯ সালের এপ্রিলে। এরপর ধীরে ধীরে বাজারমূল্যে তাদের উন্নতি হলেও অন্যান্য টেক জায়ান্টের তুলনায় এটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ ছিল।
অন্যদিকে, চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাদের বাজারমূল্য তিনগুণ বাড়িয়ে ৯ জুলাই চার ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে, যা প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক অনন্য রেকর্ড।
কিন্তু মাইক্রোসফটের অগ্রযাত্রা ছিল ভিন্নধর্মী—ধীর কিন্তু স্থির। বিশেষ করে ওপেনএআই-তে বিনিয়োগ এবং অ্যাজিউর ক্লাউডে তাদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ কাঠামোকে একেবারে বদলে দিয়েছে।
🤖 এআই: মাইক্রোসফটের গেম-চেঞ্জার
২০২২ সালের শেষের দিকে চ্যাটজিপিটি চালুর পর মাইক্রোসফট তাদের বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি একীভূত করতে শুরু করে। ওপেনএআইয়ের মূল অংশীদার হয়ে তারা লাভ করেছে একচেটিয়া প্রযুক্তিগত সুবিধা, যার প্রতিফলন মিলছে তাদের অফিস স্যুট, কোপাইলট ও অ্যাজিউর সেবায়।
এআই সুবিধাগুলো প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদরে দারুণ প্রভাব ফেলে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাইক্রোসফটের শেয়ারমূল্য দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
☁️ অ্যাজিউর: শক্তিশালী ক্লাউড পরিকাঠামো
মাইক্রোসফটের অন্যতম বড় আয়ের উৎস এখন অ্যাজিউর ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম। আমাজনের এডব্লিউএস (AWS) এবং গুগলের ক্লাউড সার্ভিসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই অ্যাজিউর বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল সেবা।
রয়টার্স জানায়, অ্যাজিউরের গ্রাহক সংখ্যা এবং রাজস্ব বৃদ্ধি এতটাই শক্তিশালী যে সেটি মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য এই ঐতিহাসিক স্তরে নিয়ে যেতে সহায়ক হয়েছে।
🧾 শেয়ারবাজারে মাইক্রোসফটের নেতৃত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সময়ের বড় উত্থানে মাইক্রোসফট অন্যতম চালিকা শক্তি। ‘এসঅ্যান্ডপি ৫০০’ এবং ‘নাসডাক কম্পোজিট’ সূচকে তাদের অংশগ্রহণ এই নতুন রেকর্ড উচ্চতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক ঘোষণা, বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা এবং এআই বাজারে আধিপত্য—সব মিলিয়ে মাইক্রোসফট শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
⚠️ ট্রাম্পের শুল্ক নীতি: আশঙ্কা থাকলেও স্থিতিশীল মাইক্রোসফট
২০২৫ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কনীতি নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হলেও মাইক্রোসফটের ব্যবসায় এখনো তার বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং ওই সময় থেকেই কোম্পানিটি আরও আক্রমণাত্মকভাবে বিনিয়োগ শুরু করে এবং কিছু ক্ষেত্রে কর্মী ছাঁটাই করেও অপারেশনাল খরচ হ্রাস করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মাইক্রোসফট এখন এমন এক অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে বিশ্বজুড়ে তারা হয়ে উঠেছে “ডেটা ও এআই প্রযুক্তির প্রধান চালক”।
✅ ভবিষ্যতের নেতৃত্বে মাইক্রোসফট?
বিশ্ববাজারে যখন অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তখন মাইক্রোসফট প্রমাণ করেছে—টেকনোলজির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এআই, ক্লাউড এবং নির্ভরযোগ্য ব্যবসার সংমিশ্রণই সবচেয়ে কার্যকর।
চার ট্রিলিয়ন ডলারের ক্লাবে প্রবেশ কেবল একটি সংখ্যা নয়, এটি মাইক্রোসফটের নেতৃত্ব, ভবিষ্যৎ দর্শন এবং বিশ্ব প্রযুক্তি ব্যবস্থার পুনঃসংজ্ঞায়নের এক স্পষ্ট বার্তা।