![]() |
ছবি: সংগৃহীত |
বিশ্লেষকরা আগে থেকেই ধারণা করেছিলেন—এ বৈঠকে কোনো না কোনো চুক্তি বা অগ্রগতি আসবে। কিন্তু বৈঠক শেষে হতাশা নিয়েই ফিরতে হলো কূটনৈতিক মহলকে।
চুক্তি নয়, শুধু আলাপ
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, “There’s no deal until there’s a deal।” অর্থাৎ আলোচনায় যত অগ্রগতি হোক না কেন, কোনো লিখিত অঙ্গীকার না হলে সেটিকে চুক্তি বলা যাবে না।
তিনি জানান, বৈঠকে “কিছু দারুণ অগ্রগতি” হয়েছে, তবে যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তির বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। সাংবাদিকদের সামনে এসে মাত্র কয়েক মিনিট কথা বলেই তিনি স্থান ত্যাগ করেন। এতে স্পষ্ট হয়, আলোচনায় প্রত্যাশিত অগ্রগতি আসেনি।
আলোচনায় এগিয়ে গেলেন পুতিন
বৈঠক শেষে সবচেয়ে বেশি আলো কাড়েন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ট্রাম্পের কাছ থেকে লালগালিচা সংবর্ধনা এবং উষ্ণ আতিথেয়তা পান তিনি। ফলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই বৈঠকে প্রকৃত বিজয়ী আসলে পুতিন।
পুতিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সংঘাতের মূল কারণগুলো দূর না করলে স্থায়ী শান্তি আসবে না।” যদিও তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি মূল কারণ বলতে তিনি কী বোঝাচ্ছেন। তবে তার বক্তব্যে আভাস মেলে যে রাশিয়া এখনো ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এমন পরিস্থিতিতে কিয়েভে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা হলেও উদ্বেগও কমেনি। কারণ, চুক্তি হলে ইউক্রেন হয়তো ভূখণ্ড হারাতো, কিন্তু যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় রুশ হামলা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
ট্রাম্পের ‘চুক্তিবাজ’ খ্যাতিতে আঘাত
নিজেকে শান্তির দূত ও দক্ষ চুক্তিবাজ হিসেবে পরিচিত করতে ভালোবাসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু আলাস্কার বৈঠক থেকে তিনি ফিরলেন কোনো চুক্তি বা সমঝোতা ছাড়াই। এ ঘটনায় তার কূটনৈতিক সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা বিবেচনায় আছেন তিনি। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প হয়তো চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু বৈঠক থেকে খালি হাতে ফেরাটা তার রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করেছে।
প্রশ্নহীন সংবাদ সম্মেলন
বৈঠকের আরেকটি বড় সমালোচনা হলো—যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল না। দুই নেতা নিজেদের বক্তব্য দিয়ে দ্রুত মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। সাংবাদিকদের চিৎকার করেও তারা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।
অনেকেই বলছেন, এমন পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ট্রাম্প ও পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে এখনো বড় ধরনের মতবিরোধে আছেন।
ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
অ্যাঙ্করেজ বৈঠকে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কিয়েভে একদিকে স্বস্তি—কারণ ভূখণ্ড হারানোর মতো কোনো চুক্তি হয়নি। অন্যদিকে উদ্বেগ—পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আলাস্কার বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনের পাশে আরও দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়তে পারে এবং ইউক্রেন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার লড়াইয়ে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।