![]() |
ছবি: সংগৃহীত |
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের আসন্ন আলাস্কা বৈঠককে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা–কল্পনা। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এটিই তাদের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক, যা ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক কৌশলগত সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর আশঙ্কা, বৈঠকের ফলে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড হারিয়ে যেতে পারে। তিনি সাফ জানিয়েছেন, "এটি কখনোই হবে না।"
ইউরোপীয় দেশগুলোও বৈঠকে অংশ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে, যদিও তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ট্রাম্প এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে পাঠিয়েছেন, যিনি বলেছেন, যেকোনো চুক্তি বর্তমান যুদ্ধরেখার ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত।
প্রস্তুতিমূলক বৈঠক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ
পুতিন ও ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সম্ভাব্য চুক্তি ও কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন। ক্রেমলিন প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, পুতিন উইটকফকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। এতে বোঝা যায়, পর্দার আড়ালে আগেই অনেক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে—যেখানে ইউক্রেন সরাসরি যুক্ত নয়।
ট্রাম্প চান একটি চুক্তি যা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। সমালোচকরা একে "ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ" বললেও, ট্রাম্প এটিকে "যুদ্ধবিরতি" হিসেবে বর্ণনা করছেন। তবে এমন প্রস্তাব আমেরিকান ভোটার বা ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ইউক্রেন ও ইউরোপের বাস্তবতা
জেলেনস্কি এক ইঞ্চি ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিপক্ষে। ইউক্রেনের জনগণ যুদ্ধক্লান্ত হলেও রাশিয়ার শর্ত মেনে নেওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে। পুতিনের লক্ষ্য একটি নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ কিন্তু সামরিকভাবে দুর্বল ইউক্রেন—যা ন্যাটোর অংশ হবে না।
ইউরোপের জন্যও একটি স্থিতিশীল ইউক্রেন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা গড়ে তুলতে অন্তত এক দশক লাগবে। তবুও ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রকে মহাদেশের নিরাপত্তার মূলভিত্তি হিসেবে ধরে রাখতে চান, যা ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
চীনের সমীকরণে রাশিয়া
ট্রাম্পের বড় কৌশলগত লক্ষ্য চীনকে মোকাবিলা করা। এজন্য রাশিয়াকে চীনের প্রভাববলয় থেকে সরিয়ে আনা জরুরি। এই কারণে তিনি পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী এবং রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও বিনিয়োগের মতো প্রণোদনা দিতে প্রস্তুত।
আলাস্কা বৈঠকের ফলাফল কী হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে এই বৈঠক আন্তর্জাতিক রাজনীতির নতুন সমীকরণ তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।