চীনা বিনিয়োগ বিতর্কে উত্তাল ইন্টেল, ট্রাম্পের ‘তাৎক্ষণিক পদত্যাগ’ আহ্বান

 

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ইন্টেলের সিইও লিপ-বু তান-এর তাৎক্ষণিক পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন—

“ইন্টেলের সিইও মারাত্মকভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িত এবং অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। এই সমস্যার অন্য কোনো সমাধান নেই।”

ট্রাম্পের এই মন্তব্য প্রকাশের পর ইন্টেলের শেয়ারদর হঠাৎই পড়ে যায়, নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

কে এই লিপ-বু তান?

২০২৫ সালের মার্চে ইন্টেল নতুন সিইও হিসেবে লিপ-বু তানকে নিয়োগ দেয়। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন কো-সিইও ডেভিড জিন্সনার এবং এম জে হোলথাউসের জায়গা নেন। এর আগে ডিসেম্বর ২০২৪-এ ইন্টেলের সাবেক সিইও প্যাট্রিক গেলসিঞ্জারকে অপসারণ করা হয়।

তানের নিয়োগকে ইন্টেলের দুরবস্থা কাটিয়ে উঠার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চিপ তৈরিতে কোম্পানির ব্যর্থতা এবং সেমিকন্ডাক্টর প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া কাটিয়ে ওঠার জন্য তানকে বেছে নেওয়া হয়। মালয়েশিয়ায় জন্ম নেওয়া এবং সিঙ্গাপুরে বেড়ে ওঠা তান পূর্বে Cadence Design Systems-এর সিইও ছিলেন। এছাড়া তিনি এশিয়ার প্রযুক্তি স্টার্টআপে বিনিয়োগকারী ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম Walden International-এর প্রতিষ্ঠাতা।

বিতর্কের কারণ কী?

বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে তানের ব্যক্তিগত বিনিয়োগ এবং তার পরিচালিত ভেঞ্চার ফান্ডগুলোর বিনিয়োগ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রয়টার্স জানায়, ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তান চীনের এমন কিছু কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন, যেগুলো চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA)-র জন্য প্রযুক্তি তৈরি করে।

যদিও একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে (তান প্রাকৃতিকভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন) চীনে বিনিয়োগ আইনত নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিবিদ এটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য স্বার্থের সংঘাত হিসেবে দেখছেন।

৬ আগস্ট রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন ইন্টেলের বোর্ড চেয়ারম্যান ফ্রাঙ্ক ইয়েরিকে একটি চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন—তান চীনের উন্নত প্রযুক্তি এবং চিপ কোম্পানিতে শত শত বিনিয়োগের অংশীদার, যার মধ্যে অন্তত আটটি প্রতিষ্ঠানের সাথে PLA-র যোগসূত্র রয়েছে।

ট্রাম্পের প্রেক্ষাপট

মার্কিন-চীন প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প উন্নত প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তিনি “আমেরিকা ফার্স্ট” এজেন্ডা অনুসারে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং বিদেশি চিপ ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপর ১০০% শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন।

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই প্রকাশ্য পদত্যাগ দাবি অস্বাভাবিক এবং ব্যবসা জগতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। লাডেনবার্গ থালম্যান অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট-এর সিইও ফিল ব্লানকাটো বলেছেন—

“এটি এক নেতিবাচক নজির স্থাপন করবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের উচিত নয় কোম্পানির সিইও নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করা, যদিও তার মতামতের ওজন আছে।”

ইন্টেলের প্রতিক্রিয়া

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইন্টেল জানিয়েছে—

“ইন্টেল, বোর্ড অব ডিরেক্টরস এবং লিপ-বু তান যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।”

Post a Comment

Previous Post Next Post