গেস্টরুম সংস্কৃতি শেষে পরিবর্তন চাইছেন শিক্ষার্থীরা — ডাকসু নির্বাচন হবে বদলের যাত্রা?

ছবি: সংগৃহীত

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ‘গেস্টরুম সংস্কৃতি’ ও অবৈধ ছাত্ররাজনীতির উত্থান চরমভাবে আক্রান্ত হয়েছে। গেস্টরুম সংস্কৃতির ধারনার উদাহরণে ছিল হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতা শিক্ষার্থীদের হয়রানি, মিছিল-অনিষ্ট এবং সরকারি সম্পদে হস্তক্ষেপ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সংস্কৃতি আর ফিরবে না, তাদের আশা।

এবারের ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে দেখছেন। ঢাবির পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসরুর বলেন:
“আগে ছাত্রনেতারা শিক্ষার্থীদের মতামত না নিয়ে শুধু দলীয় স্বার্থে কাজ করতো। ডাকসু হলে সেই ধারা বদলাবে।”

অনূর্ধ্ব প্রজন্মের শিক্ষার্থী সুস্মিতা মুন্সি এ ব্যাপারে বলেন:
“দলমুক্ত, শিক্ষার্থীমুখী রাজনীতি চাই। গণ-অভ্যুত্থানের পর সময় এসেছে এ সংস্কৃতি পরিবর্তনের।”

ব্যবস্থাপন বিভাগের শিক্ষার্থী মাকসুদুল আলম নিশ্চিততার সঙ্গে বলেন,
“ভোটের ধারাবাহিকতায় প্রতিশ্রুতি মেনে চললে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা বদলে যাবে। আবাসন সংকট, ভোগান্তি, প্রশাসনিক দুর্বলতা—এসব সমাধানে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।”

অন্য শিক্ষার্থী রুমাইসা এন রহমান যোগ করেন:
“আমরা চাই ডাকসুতে নির্বাচিতরা আবাসন সমস্যা, রিডিং রুম সংকট, পরিবহন সমস্যা ইত্যাদি গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করবে।”

নির্বাচনের নির্ধারক চার ফ্যাক্টর হিসেবে শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেছেন:

  1. ভোটারদের প্রায় অর্ধেকই ছাত্রী (৪৭.৫২%)

  2. জগন্নাথ হলের ভোটার, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যাও বেশি

  3. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কারা কী ভূমিকা নিয়েছিলেন

  4. প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি

মোট ২৮টি পদে নির্বাচন হবে ৯ সেপ্টেম্বর, যেখানে ৫৬৫ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া হল সংসদে ১,২২৬ প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছেন। তালিকা প্রকাশ হবে বৃহস্পতিবার।

দুই প্রধান প্যানেল ও প্রতিচ্ছবি

ছাত্রশিবির ঘোষিত “ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট” প্যানেলে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের “ডাকসু ফর চেঞ্জ, ভোট ফর চেঞ্জ” প্যানেল এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের “বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ” প্যানেল ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। “স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য” প্যানেলেও বৈচিত্রময় প্রার্থী রয়েছে। বামপন্থী ও ছাত্রদলও তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ তুলেছেন, বলছেন গ্রুপিত মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় আবাসিক হলে নেতাদের প্রভাব আছে—সাম্য ও নিরপেক্ষতার অভাব দেখা দেয়। এই অভিযোগের প্রতিবাদ স্বরূপ লেখাপড়া কেন্দ্রিক, শিশুপ্রাধান রাজনীতির ডাকসু চান।

Post a Comment

Previous Post Next Post