ভারতের রপ্তানি খাতকে বড় ধাক্কা: যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কে বিপাকে চামড়া, পোশাক ও চিংড়ি শিল্প

 

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের চামড়া, রাসায়নিক, জুতা, রত্ন ও গয়না, বস্ত্র এবং চিংড়ি রপ্তানি খাত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন দেশটির শিল্প বিশেষজ্ঞরা। বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ তেল কেনায় ভারতের অনড় অবস্থানের জবাবে ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। ফলে মোট শুল্ক এখন দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।

এই সিদ্ধান্তে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বিভিন্ন পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে জানায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিটিআরআই। তারা বলছে, এতে ভারতের রপ্তানি ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপিত হয়েছে জৈব রাসায়নিক (৫৪%), নিট পোশাক (৬৩.৯%), তাঁতবস্ত্র (৬০.৩%), রত্ন ও গয়না (৫২.১%), আসবাবপত্র ও গদি (৫২.৩%), যন্ত্রপাতি (৫১.৩%) এবং কার্পেট (৫২.৯%) খাতে। নতুন এই শুল্ক ৭ আগস্ট সকাল ৯টা ৩০ মিনিট (ভারতীয় সময়) থেকে কার্যকর হবে, আর আরও একটি ধাপের শুল্ক কার্যকর হবে ২৭ আগস্ট থেকে।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল প্রায় ১৩১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারতের রপ্তানি ছিল ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই অতিরিক্ত শুল্কে ভারতে উৎপাদিত পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা রপ্তানিকারকদের।

ভারতের পোশাকশিল্পের শীর্ষ সংগঠন সিআইটিআই বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় পোশাক বাজার। নতুন শুল্ক আমাদের জন্য বিশাল ধাক্কা।” সংগঠনটি সরকারের প্রতি খাতটিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

চিংড়ি রপ্তানিকারক যোগেশ গুপ্ত জানান, ইতিমধ্যে ভারতীয় চিংড়ির ওপর ২.৪৯ শতাংশ অ্যান্টি-ডাম্পিং এবং ৫.৭৭ শতাংশ কাউন্টারভেলিং ডিউটি আছে। এখন নতুন ২৫ শতাংশ যুক্ত হওয়ায় মোট শুল্ক হবে ৩৩.২৬ শতাংশ। এদিকে ইকুয়েডরের ওপর কেবল ১৫ শতাংশ শুল্কই বলবৎ রয়েছে, যা প্রতিযোগিতাকে আরও কঠিন করে তুলবে।

রত্ন ও গয়না রপ্তানিকারক কলিন শাহ বলেন, “এই শুল্ক কার্যত আমাদের ৩০-৩৫ শতাংশ প্রতিযোগিতামূলক ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক অর্ডার বাতিল হয়েছে। পণ্যের চূড়ান্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্রেতা নতুন উৎসের খোঁজ করছেন।”

তবে আশার কথা হলো, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী বাণিজ্যচুক্তির আলোচনা চলছে। লক্ষ্য করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে প্রাথমিক চুক্তি সই হতে পারে। যদিও কৃষিপণ্য ও জিএম খাদ্যপণ্যে শুল্কছাড় প্রশ্নে ভারত এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিনিধিরা বলছেন, ভারতকে নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়াতে দ্রুত কৌশল নিতে হবে, নইলে বহু খাতই স্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়বে।

Post a Comment

Previous Post Next Post