![]() |
ছবি: সংগৃহীত |
রয়টার্স জানায়, শুক্রবার আলাস্কায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক করেন পুতিন। চার বছরেরও বেশি সময় পর এটি ছিল প্রথম রাশিয়া-মার্কিন শীর্ষ সম্মেলন। বৈঠক শেষে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে পুতিন বলেন, “এই বৈঠক ইউক্রেনে শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার দরজা খুলে দিতে পারে।” যদিও দুই পক্ষই আলোচনার বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি। পরে রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে পুতিনের প্রস্তাবের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হয়।
সূত্রগুলো জানায়, নতুন প্রস্তাবে পুতিন তার পূর্বের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। গত বছর তিনি ইউক্রেনকে চারটি অঞ্চল—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া ছেড়ে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। তবে সর্বশেষ প্রস্তাবে তিনি শুধু দনবাস অঞ্চল পুরোপুরি ছাড়ার কথা বলেছেন। এর বিনিময়ে খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ায় যুদ্ধ থামানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। মার্কিন তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়া দনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ এবং খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার প্রায় ৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
এ ছাড়া নতুন প্রস্তাবে রাশিয়া ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি ও দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের ছোট ছোট দখলকৃত অংশ ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে ন্যাটো ইস্যুতে পুতিনের অবস্থান অপরিবর্তিত। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে এবং জোটকে আইনগত নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, আর কোনো সম্প্রসারণ পূর্ব দিকে হবে না। পাশাপাশি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হবে এবং কোনো পশ্চিমা সেনা শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবেও ইউক্রেনে মোতায়েন হওয়া চলবে না।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুই পক্ষের অবস্থানে বড় ধরনের দূরত্ব থেকেই যাচ্ছে। ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু হয়, যদিও এরও আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহারের শর্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
জেলেনস্কি দনবাস অঞ্চলকে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকানোর “দুর্গ” বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, “যদি শুধু পূর্বাঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার শর্ত থাকে, সেটি আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি আমাদের দেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন। সেখানে আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।”
ইউক্রেনের সংবিধানে ন্যাটোতে যোগদানকে কৌশলগত লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিয়েভের মতে, এটাই তাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। জেলেনস্কি স্পষ্ট বলেছেন, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে কি না, তা নির্ধারণের ক্ষমতা রাশিয়ার নেই। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রস্তাব নিয়ে এখনো হোয়াইট হাউস বা ন্যাটোর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।